১. ভূমিকাঃবৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির বিরতিহীন বারিধারায় স্নাত গারো পাহাড়ে সৃষ্টি হয় অসংখ্য ছড়া ও ঝর্ণা ধারা।সেসব ছড়া ও ঝর্ণা থেকে উৎপন্ন নদী বেমুনা, যাদুকাটা, রক্তি, পিয়াইন, দিগড়পিয়াইন, ধামালিয়া, আবুয়া, কংশ, ধনু, দৌলতা, ভীমখালী, কানাইখলিী ও সিলেটবিধৌত সুরমা নদীসমূহের বাঁধভাঙ্গা স্রোতে গড়িয়ে আসা বালি, কাঁকর, লতাগুল্ম, বৃক্ষাদি তলানী হিসেবে সঞ্চিত হতো কিংবদন্তির কালিদহ সাগরের তলদেশে। সুদীর্ঘ সময়ের এসব তলানী পলে পলে পলিচাপা পড়ে সঞ্চিত হতে থাকে জলতলে। অতঃপর সময়ের আবর্তনে ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, পলিভরাট ইত্যাদি ও নৈসর্গিক কারণে তিলে তিলে সাগরের তলদেশ থেকে জেগে ওঠা ভূমিই জামালগঞ্জ এলাকা্।
১৯৮৪ সনের ১৮ এপ্রিল মান উন্নীত জামালগঞ্জ থানার স্মৃতিফলক উম্মোচন করেন মনসুর আফজাল টি, কিউ, এ। অত্র থানার ফতেহপুর ইউনিয়নকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় কেটে নিয়ে প্রথমে মান উন্নীত থানা এবং পরে জামালগঞ্জ থানার নামকরণ করা হয় জামালগঞ্জ উপজেলা।বর্তমানে জামালগঞ্জ, সাচনা বাজার, বেহেলী, ভীমখালী ও ফেঁনারবাক এ পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা গঠিত।
২. নামকরণের পটভূমিঃ জামালগঞ্জ-এর নামকরণে ভাটীপাড়ার বয়োবৃদ্ধ জমিদার মরহুম এখলাছুর রহমান চৌধুরীর মতামত প্রণিধানযোগ্য। ১৯৬৪ সালে জনাব এখলাছুর রহমান চৌধুরীর দেয় তথ্য থেকে জানা যায় যে, তাঁদের বংশের পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে জামাল ফারুকী নামে একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ভাটীপাড়া এস্টেট কর্তৃক নতুন ক্রয়কৃত দুটি তালুকের নামকরণ করা হয় জামালগড় ও জামালপুর। অতঃপর সাচনা বাজারের সঙ্গে নদীর পশ্চিমপাড়ে প্রতিযোগিতামূলক একটি নতুন বাজার প্রতিষ্ঠিত হলে এর নামকরণ করা হয় জামালগঞ্জ। “জামাল”-আরবী শব্দ-এর অর্থ মনোরম বা সুন্দর এবং “গঞ্জ”শব্দের অর্থ বাজার বা যেখানে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। আবার “গঞ্জ”অর্থ শহরও বোঝায়। সে বিচারে জামালগঞ্জ হচ্ছে সুন্দর বা মনোরম শহর।
৩. অবস্থানঃপূণ্য ও শ্রীভূমি সিলেট বিভাগের অন্তর্গত, বালি-পাথর, ধান-গান আর মৎস্য সম্পদে পরিপূর্ণ; হাওরের রাজধানী সুনামগঞ্জের ২৩ কি:মি: পশ্চিমে জামালগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। ইহা ২৪৫০''থেকে ২৫০৪'' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১০৫''থেকে ৯১১৯''পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
৪. আয়তনঃবর্তমানে আয়তন ৩৩৮.৭৪বর্গকিঃমিঃ।
৫. মানচিত্রঃ
৬. সীমানাঃডিস্ট্রিক্ট গ্যাজেটিয়ার্স সিলেট থেকে জানা যায়, ১৯৪০ সনের ১২ এপ্রিল ‘জলথানা’ হিসেবে সুরমার বুকে ভাসমান বোটে জামালগঞ্জ থানার যাত্রা শুরু হয়। তখন এ থানার সীমানা ছিল উত্তরে লাউড় পরগনা, দক্ষিনে দিরাই ও খালিয়াজুড়ি থানা, পূর্বে লক্ষণশ্রী ও পাগলা পরগণা এবং পশ্চিমে মোহনগঞ্জ থানা, সেলবরষ ও সুখাইড় পরগনা। বর্তমানে জামালগঞ্জউপজেলারউত্তরেতাহিরপুরওবিশ্বম্ভরপুরউপজেলা, দক্ষিণেখালিয়াজুরীওদিরাইউপজেলা, পূর্বেসুনামগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলা। এউপজেলা মেঘালয় রাজ্যের পর্বত শ্রেণীর অতিসন্নিকটে যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেমন্ডিত অনেক হাওড় ও বাওররয়েছে।
৭. জনসংখ্যাঃ৫টি ইউনিয়ন, ১০২ টি মৌজা ও ১৯২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত জামালগঞ্জ উপজেলায় ২০১১ সালের আদমশুমারী রিপোর্ট আনুসারে মোটজনসংখ্যা ১,৬৭,২৬ জন(এর মধ্যে পুরুষ-৮৪,৬১২জন এবংমহিলা–৮২,৬৪৮জন)।
৮. শিক্ষায় জামালগঞ্জের অতীত বর্তমান
অতীত কাল থেকে জামালগঞ্জের মানুষ, ‘মোটা চালের সেরেক ভাত’ পেটপুরে খেয়ে অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকে দিব্যি আরামে নাক ডেকে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে যুগের পর যুগ। জামাগঞ্জবাসীর অশিক্ষার এ হেন দুর্ভেদ্য দুর্গে শিক্ষার প্রদীপ জ্বালাতে যে ক’জন দুঃসাহসী ব্যক্তি নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে অত্র এলাকার অশিক্ষার অমানিশা বিদূরণ করেছেন সে সব চিরস্মরণীয় ব্যক্তি এবং তাদের তৈরী আলোকবর্তিকা সমূহের সম্যক পরিচিতি এখানে তুলে ধরছি ।
জামালগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ঃ ১২/০৯/১৯৮৫ তারিখে জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত প্রশাসনিক ভবনে জামালগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন চট্রগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার জনাব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। অতঃপর ২২/০১/১৯৮৭ তারিখে জামালগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন জেলা প্রশাসক জনাব আবুল কাশেম।১৯৮৭ সনে জামালগঞ্জ মহাবিদ্যালয় নিজস্ব ভাবে বোর্ডের পরীক্ষা সমূহ পরিচালনা করে আসছে।
৮.১ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা
জামালগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ঃ নয়াহালট গ্রামের রহমত উল্লাহ তালুকদার ও মৌলভী আবুল বরকত এলাকার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিগণের সহযোগিতায় জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৪৮ ইং সনে বর্তমান জামালগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। বহমান সুরমার পশ্চিম তীরের স্বপ্নের শহরে জামালগঞ্জ এর উত্তর পার্শ্বে প্রতিষ্ঠিত জামালগঞ্জ বিদ্যালয়ের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্য দান করেছে।
ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয়ঃ জামালগঞ্জ থানার তৎকালীন একমাত্র মুসলিম গ্র্যাজুয়েট, মৌলীনগর গ্রামের জনাব আব্দুর রশিদ ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ভীমখালী উচ্চ বিদ্যালয়।
আলাউদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ঃফেনারবাঁক ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল খালেক চৌধুরী সেলিমগঞ্জ বাজারে ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একটি জুনিয়র হাইস্কুল।অতপর ১৯৯৩ সালে উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে বোর্ডের অনুমোদন প্রাপ্ত হয়।
নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ঃ গঙ্গাধরপুর গ্রামের গগন মাষ্টার ১৯৪৩ইং সনে নিজ বাড়ীতে প্রতিষ্ঠা করেন গৌড়চরণ এম.ই.স্কুল। ১৯৬৯ সালে জানুয়ারী মাসে অত্র গঙ্গাধরপুর গ্রামের দেবেন্দ্র কুমার তালুকদারের সহযোগিতায় নওমৌজার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিগণের সমর্থনপুষ্ট হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন(গঙ্গাধরপুর জুনিয়র হাই স্কুল)১৯৭২ইং সনের ১লা জানুয়ারী সর্বসম্মত ভাবে এ বিদ্যালয়ের স্থানান্তর ঘটে খোজারগাঁও গ্রামের উত্তর পার্শ্বের শ্মাশান ভীটে এবং এর নতুন নামকরণ হয় ‘গঙ্গাধর পুর-খোজার গাঁও জুনিয়র হাইস্কুল।
হাজী আছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ঃ ১৯৯৪ সালে আটগাঁও মাহমুদপুরের কিছু সংখ্যক বিদ্যোৎসাহী তরুণ বর্তমান শিক্ষার গরুত্ব অনুধাবন করে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করে ২২ বছর পূর্বের তাদের স্মৃতি বিজড়িত অবলুপ্ত আটগাঁও নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়টি। ০১/০১/১৯৯৬ খ্রিঃ তারিখে নিম্ন মাধ্যমিক জুনিয়র বিদ্যালয় হিসেবে পূর্বানুমতি লাভ করে। অতঃপর ০১/০১/১৯৯৭ খ্রিঃ তারিখে জুনিয়র হাইস্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ০১/০৪/১৯৯৯ থ্রিঃ তারিখে এম.পি ভূক্ত হয়।নামকরণ করা হয় হাজী আছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়।
জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ঃ জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ক্রমবর্ধমান চাপ অবলোকন করে প্রধান শিক্ষক জনাব গোলাম কিবরিয়া জামালগঞ্জে একটি মহিলা মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।অতঃপর ১০/০৪/১৯৮১ খ্রিঃ তারিখে জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন মহকুমা প্রশাসক জনাব আশরাফ আলী।১৪/০৪/৮২ থ্রিঃ তারিখে জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক-সিলেট জনাব এ.এইচ.এম সিরাজুল হক।
সাচনা বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ঃ২২/০১/১৯৮৯ খ্রিঃ তারিখে উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব আবুল মনসুর আহমদ তালুকদার সাচনা পশ্চিম বাজারে পরিত্যক্ত দাতব্য চিকিৎসালয়ে ‘সাচনা বাজার জুনিয়র স্কুল’ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন।
বেহেলী উচ্চ বিদ্যালয়ঃ২১/০১/১৯৯৩তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সিরাজুল ইসলাম শেখ বেহেলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন।০১/০১/১৯৯৫ তারিখে বিদ্যালয়টি প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে এবং ০১/০১/১৯৯৭ তারিখে বিদ্যালয়টি এম.পি.ও ভূক্ত হয়।
জামালগঞ্জ কিন্ডার গার্টেনঃ একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিশু শিক্ষা নিকেতন হচ্চে জামালগঞ্জ কিন্ডার গার্টেন বা কে,জি,স্কুল।থানা নির্বাহী অফিসার জনাব এম.এ. বাশার সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি ২৫/০৩/১৯৯৫ তারিখে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জনাব কামাল উদ্দিন। আধুনিক সাজ সরঞ্জাম ও উন্নতমানের আসবাবপত্র সজ্জিত এ বিদ্যালয়টি ১০জন শিক্ষকের নিঁপুন শিক্ষাদানে পরিচালিত হয়ে আসছে।
৮.২ মাদ্রাসা শিক্ষায় জামালগঞ্জ।
অষ্টগ্রাম মাহমুদপুর কওমী মাদ্রাসাঃ ১৯৩২/৩৩ সনে তৎকালীন লোকাল বোর্ডের সদস্য মরহুম আব্দুল বারী তালুকদার, নুর আলী মিয়া এর মধ্যস্থতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টি একীভূত করে ১৯৪৪ সনে আটগাঁও এম.ই স্কুলে প্রবর্তিত করেন। পরে এম.ই স্কুলের কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে গেলে ১৩৬৬ বাংলায় এখানে পুণরায় চালু হয় ইসলামী শিক্ষা। এলাকাবাসী নতুন করে এর নামকরণ করেন অষ্টগ্রাম মাহমুদপুর মাদ্রাসা।
সুখদেবপুর মাদ্রাসাঃ সাচনা বাজার ইউনিয়নের অর্ন্তগত সুখদেবপুর গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ১৯৫৮ সনে প্রতিষ্ঠা করেন সুখদেবপুর মাদ্রাসা এবং ১৯৬০ সনে মাদ্রাসাটি সরকারের স্বীকৃতি লাভ করে এবং মঞ্জুরী প্রাপ্ত হয়।
লক্ষীপুর তাওয়াক্কুলিয়া দাখিল মাদ্রাসাঃ ফেনারবাঁক ইউনিয়নের অর্ন্তগত লক্ষীপুর গ্রামের প্রসিদ্ধ জুম্মা বাড়িতে আংশিক দান ও মসজিদ সংলগ্ন খরিদা ভূমির উপর ১৯৬২সনে প্রতিষ্ঠিত হয় লক্ষীপুর তাওয়াক্কুলিয়া দাখিল মাদ্রাসা। ১৯৭৮ সনে মাদ্রাসাটি সরকারের স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়।
সাচনা বাজার দাখিল মাদ্রাসাঃ ১৯৬৫ সনে সাচনা বাজার দাখিল মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন সে সময়কার মহকুমা প্রশাসক জনাব শামছুল আলম, সি.এস.পি এবং ১৯৬৬ সনে সাচনা বাজার মাদ্রাসা কার্যক্রম শুরু হয়।
নওগাঁও-অষ্টগ্রাম ইসলামিয়া মাদ্রাসাঃ ভীমখালী ইনিয়নের অর্ন্তগত নওয়াগাঁও, বিছনা, মীর্জাপুর, বাহাদুরপুর, জাল্লাবাজ, উজ্জলপুর, চানবাড়ি ও মৌলীনগর ইত্যাদি আটটি গ্রামের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিগণ ১৯৭৫ সনে ১লা জানুয়ারী প্রতিষ্ঠা করেন নওগাঁও অষ্টগ্রাম মাদ্রাসা।
বিছনা আজিজিয়া মাদ্রাসাঃ ১৯৭৫ সনে বিছনা গ্রামের পশ্চিম পার্শ্বে নওগাঁও ভীমখালী রাস্তার গা ঘেষে প্রতিষ্ঠিত বিছনা আজিজিয়া মাদ্রাসা।
কালিপুর নেছারিয়া মাদ্রাসাঃ জামালগঞ্জ উপজেলায় ১৯৭৮ সনে কালিপুর গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত হয় কালিপুর নেছারিয়া মাদ্রাসা।০১/০৭/১৯৭৯ তারিখে মাদ্রাসাটি মাদ্রাসাবোর্ডের অনুমোদন লাভ করে।
নয়াহালট ইসলামিয়া আলীয়া মাদ্রাসাঃ ১৯৭৯ সনে নয়াহালট গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলিম বাসিন্দাগণের সাহায্য ও সক্রিয় সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নয়াহালট ইসলামিয়া আলীয়া মাদ্রাসা।
কাশিপুর এবতেদায়ী মাদ্রাসাঃ ১৯৯৫ সনে কাশিপুর এবতেদায়ী মাদ্রাসা উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান আব্দুর রউফ। পরবর্তী পর্যায়ে এ মাদ্রাসার বিল্ডিং এর ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব ইউমিসুফ-আল আজাদ। এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোগী ব্যক্তিগণের মধ্যে কাশিপুর গ্রামের প্রাক্তন ইউপি সদস্য জনাব রেজাউল করিম ছিলেন অন্যতম।
লক্ষীপুর তায়ীদুল ইসলাম রহমানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসাঃ জামালগঞ্জ ইউনিয়নের অর্ন্তগত লক্ষীপুর গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে লক্ষীপুর তায়ীদুল ইসলাম রহমানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।
মল্লিকপুর-পঞ্চগ্রাম কওমী মাদ্রাসাঃ ১৯৯০ সনে মল্লিকপুর, ভান্ডা, মাখরখলা, রাজাবাজ, হারাকান্দি, সন্তোষপুর গ্রাম সমূহের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিগণ প্রতিষ্ঠা করেন মল্লিকপুর পঞ্চ-গ্রাম-কওমী মাদ্রাসা।
হাজী জুলেখা তায়েব ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসাঃ জনাব আব্দুর রাজ্জাক, পিতা মৃত হাজী তায়েব আলী প্রধান উদ্যোক্ত হয়ে পারিবারিক সম্মিলিত প্রয়াসে এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ০১/০১/১৯৯১ তারিখে প্রতিষ্ঠা করেন এ মাদ্রাসাটি।
জামালগঞ্জ ফুরকানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসাঃ ১৯৯৪ সনে জামালগঞ্জ জামে মসজিদ সংলগ্ন পশ্চিম অংশে নির্বাহী অফিসার জনাব সিরাজুল ইসলাম শেখ জামালগঞ্জ মসজিদ কমিটির সদস্যবৃন্দের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠা করেন “জামালগঞ্জ ফুরকানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা”।
৯. স্বাস্থ্যঃ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১টি, (শয্যা-৩১টি) কর্মরত চিকিৎসক ৩জন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রঃ ০১টি ।পরিবার পরিকল্পনাঃ পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র:-৩টি, আঞ্চলিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র (পরিবার পরিকল্পনা)০১টি।কমিউনিটি ক্লিনিক:১৬টি, সেটেলাইট ক্লিনিক:২৮টি।
১০. যোগাযোগঃহাওর বাওর বেষ্টিত এ উপজেলায় মোট ২৩৯.৬১কি:মি: রাস্তার মধ্যে পাকা রাস্তা ৪৫.০০কি:মি: কাঁচা রাস্তা ১৯৪.৬১ কি:মি: জেলা সদরের সাথে সড়ক পথে ৩৬ কি:মি: লেগুনা, সিএনজি চালিত গণপরিবহন এবং নদীপথে ট্রলার, ও লঞ্জযোগে যাতায়েত করা যায়। যাতায়েতে নদীপথে প্রায় ২.৫(আড়াই)ঘন্টা, সড়ক পথে ১.৫(দেড়) ঘন্টা সময় লাগে।
১১. দর্শনীয় স্থানঃদর্শনীয় স্থানের বর্ণনা ও ছবিঃ সাচনা বাজার অত্র উপজেলার গুরুত্বপূর্ণস্থান, এথেকে সরকারের অনেক রাজস্ব অর্জিত হয়। এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধে এ উপজেলার রয়েছে অনেক অবদান। কমরেড বরুণ রায় সহঅনেক জ্ঞানী গুনী লোকজন অত্র উপজেলায় জন্ম গ্রহণ করেছেন। অত্র উপজেলায় দর্শনীয়স্থান হিসেবে, জগন্নাথজিউরআখড়া, সাচনাবাজারও উলুকান্দি, যতিন্দ্রপুর হিজল করচের বাগ, রহিমাপুরের হিজল করচের বাগ, বদরপুর বন্যাশ্রয়কেন্দ্র।
ছবি |
স্থান |
|
জগন্নাথ জিউর আখড়া, সাচনা বাজার। |
|
উলকান্দি, যতিন্দ্রপুর হিজল করচের বাগ, রহিমাপুরের হিজল করচের বাগ, বদরপুর বন্যাশ্রয়কেন্দ্র।
|
১২. জন প্রতিনিধিগণঃ
ছবি |
নাম |
পদবী |
মোবাইল/টেলিফোন নং |
নির্বাচনী এলাকা |
|
রনজিত চন্দ্র সরকার |
সংসদ সদস্য
|
|
জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, মধ্যনগর। সুনামগঞ্জ-০১ |
মোঃ রেজাউল করিম শামীম
|
উপজেলা চেয়ারম্যান জামালগঞ্জ। |
মোবাইল নাম্বার ০১৭১৭৩১০০৩৭ টেলিফোন 08728-56055
|
জামলগঞ্জ উপজেলা |
|
|
মোঃ আকবর হোসেন
|
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, জামালগঞ্জ। |
০১৭১৫৩৫৭৫০০ |
জামলগঞ্জ উপজেলা |
মারজানা ইসলাম শিবনা
|
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান,জামালগঞ্জ। |
০১৭১০৮০৮৭১০ |
জামলগঞ্জ উপজেলা |
১৩. উপজেলার সমস্যা ও সম্ভাবনাঃ
১৩.১ অপার সম্ভাবনার জলাভূমিঃজামালগঞ্জ থানার উল্লেখ যোগ্য জল-মহালের মধ্যে রয়েছে ছাগাইয়া, ভান্ডা, আয়লা, দিরাই, চত্তল, নলচুন্নী, বলহর, ছাতিধরা, পাকনা, ধলাপাকনা, কসমা, ভূতিয়ারগাঙ্গ (বর্তমানে মৃত), জামলাবাজের নীম ও রামপুরের নীম ইত্যাদি। এ সব ছাড়া জামালগঞ্জ থানার প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে প্রচুর বিল-বাদল ডুবা-নালা। জামালগঞ্জ থানার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয় ঐসব জল-মহালে এবং ভাসান পানির মাছের কারবারে। এখানকার কাঁচা মাছ-শুটকি মাছ উপাদেয় খাদ্য হিসেবে সারা দেশের আমিষের চাহিদা পূরণের যথেষ্ট সহায়ক। সরকার জামালগঞ্জ মৎস্য সম্পদ থেকে ফি-বছর প্রায় কোটি টাকার মত রাজস্ব পাচ্ছে। অথচ অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় উন্নয়নের চরম সয়লাবের যুগেও এখানে গড়ে তোলা হয়নি কোন হীমাগার, করা হয়নি মাছ শুকানোর কোন আধুনিক যন্ত্রায়ন। যান্ত্রিক যোগাযোগ এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাছ সরবরাহের বিলম্ব হলে সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হয় মৎস্যজীবিগণ।
জামালগঞ্জ থানার বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে পাংগাশ, ঘাগট, নানীদ, ফোঁটা(এগুলো বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়) বোয়াল, শোল, গজার, চিতল, রুই, কাতলা, কাইলা, বাঁউশ, আইড়, রিডা, ভূতিয়া, ঘইন্না, করা, মিকরা, বাইম, সিং, মাগুর, গাংমাগুর, কৈ,খলিসা, ফইল্লা বা কাংলা, বাসপাতা, পাইব্যা বা পাবদা, হল্লা, লাচ, এলং, রাণী, গইরা বা চেং করকরিয়া, ভেদা, কাউয়া, একটুটিয়া, ফুগা বা চাপলিয়া, মলা, ডেলা, দারকিনা, গুতুম, কেচকী, ইঁচা, গলদা ইঁচা, গাগলা, গুলসিয়া, বেতগুইঙ্গা, গুইঙ্গ বা টেংরা, চান্দা, ফটকা ইত্যাদি।
জামালগঞ্জ থানার মাছের অভয়াশ্রম ছিল আয়লাবিল। ভাটীপাড়ার এষ্টেইটের নিয়ন্ত্রনাধীন এ বিলে প্রভূত পরিমাণে মাছ পরলক্ষিত হতো। জমিদারগণের পক্ষ থেকে মাছ ধরা সাঙ্গ হলে পার্শ্ববর্তী বিশ গাঁয়ের মানুষ এক সঙ্গে এমনকি দিনকে দিন মাছ ধরেও আয়লাবিলের মাছের কোন শেষ দিতে পারতো না।অথচ সুগভীর বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ গভীর আয়লাবিল আজ জরাজীর্ণ-রুগ্ন। মাছের এলাকা জামালগঞ্জ আজ মাছহীন। দুর্মূল্যের কারণে এবং এক শ্রেণীর লোভী ইজারাদারের প্রতাপে সাধারণ মানুষ আজ হাতের কাছের আমিষের চাহিদা পূরণে হচ্ছে ব্যর্থ।
১৩.২ জামালগঞ্জের পাখ-পাখালী: জামালগঞ্জ থানার বিভিন্ন রকম ঝোপ-ঝাড়,লতা,-গুল্ম, বন-জঙ্গল ও বৃক্ষরাজি সদা-সর্বদা নানা প্রকার পাখ-পাখালিতে থাকতো পরিপূর্ণ। কাকের ‘কা-কা’ কুকিলের ‘পিউ-কাহা’, বউ কথা কউ’ পাখির ডাক সহ বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে ভেসে আসা অগণিত পাখ-পাখালীর কিঁচির মিঁচির শব্দে গ্রামবাসী অতি ভোরে জেগে উঠতো। তাছাড়া শীতের মৌসুমে হাওড়ে পতিত অসংখ্য অতিথি পাখির জন্য সে সময় নির্ভরযোগ্য অভয়ারণ্য ছিল আয়লা বিল। ভাটীপাড়া জমিদারগণের কড়া পাহাড়াদার থাকতো সে বিলের চারিদিকে। পাখির উপাদেয় খাদ্যে ভরপুর ছিল সে বিল।পার্শ্বের ঝোপ-জঙ্গল ছিল পাখিদের নির্ভয় আশ্রয় এবং বিলের মাছ ছিল তাদের উপাদেয় খাদ্য। নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ শিকারী অতিথি ও জমিদারগণের আত্মীয়-স্বজন একত্রিত হয়ে এক সঙ্গে বিলের চারপাশ হতে বন্দুক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তো পাখিদের উপর। দশ গাঁয়ের লোক ধরতো সে পাখি। তার পর শুরু হতো পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীদের পাখি শিকার। তবু অতিথি পাখির আসা-যাওয়া বন্ধ হতো না। নির্দিষ্ট সময়েই আসতো তারা, কিন্তু এখন আর ঝাঁকে-ঝাঁকে আসে না অতিথি পাখি। কারণ মাছ ও পাখির অভয়শ্রম আয়লা বিল হারিয়ে ফেলেছে তার অতীত অবস্থান ও পরিবেশের ভারসাম্য।
অবস্থানগত কারণে আমাদের অত্র এলাকার পাখিকূলকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে। যথাঃ-১। গৃহপালিত পাখি, ২। স্থানীয় পাখি এবং ৩। অতিথি পাখি।
১।গৃহপালিত পাখি হচ্ছে: - হাঁস, মুরগ, কবুতর, তাছাড়া জালালী কবুতর শালিক, দোয়েল, কুড়া, ময়না, এগুলোকে গৃহপালিত বললেও বলা যায়।
২। স্থানীয় পাখির মধ্যে রয়েছে: - কাক, বক, চিল, গাংচিল, হঁউচ্চা, শকুন, কউড়া বা ঈগল (বর্তমানে বিলুপ্তির পথে), খঞ্জন, পেঁছা, ফিঙ্গে, বাবুই, চঁড়ই, হটা, কটকটিয়া, টুনটনি, ফেঁছকুনী, হলদে-পাখি, ডাহুক ইত্যাদি।
৩। অতিথি পাখি: - অতিথি পাখির মধ্যে আমরা দেখতে পাই-লেঞ্জা, ফরালী, বালিহাঁস, রাজহাঁস হারগিলা, ফেরফেরি, চেরচেরি, মুলুবি, ইত্যাদি নানা রকমের পাখি। বোর ক্ষেতে পাখি পড়লে ক্ষেত সাময়িক নষ্ট হলেও পাখির বিষ্টা জৈব সার, টুট ও পায়ের নখের আঁচড়ে ক্ষেত নিড়ানোর কাজ হয়, ফলে ধানের উৎপাদন বাড়ে বৈ কমে না।
হাঁস মুরগী পালন করে না, জামালগঞ্জ থানায় এমন পরিবার আছে বলে মনে হয় না। কারণ হাঁস মুরগী পালনে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা, খাদ্য ও চারণ ভূমির অভাব নেই অত্র এলাকায়। বর্তমানে অনেক প্রগতিশীল শিক্ষিত বেকার যুবক হাঁস-মুরগী ফার্ম করার জন্য চিন্তা ভাবনা করছে। স্থানীয় যুব উন্নয়ন সংস্থার আর্থিক অনুদান, পরামর্শ, সাহায্য ও সহযোগিতা পেলে অনেক বেকার যুবকের কর্ম সংস্থান হবে এবং সুচিত হবে উন্নয়নের এক নতুন দ্বার।
১৩.৩ বনজ সম্পদে জামালগঞ্জ: জামালগঞ্জ থানার বনজ সম্পদের অফুন্ত ভান্ডারে সঞ্চিত ছিল-হিজল, করচ, জারই, বট, নিম, গাব, শেওড়া, মান্দার, মেরা, বরুণ, বাঁশ, বেত, মুক্তা, বিন্না, বনতুলসী, বউল্লা, গোজা, নল, খাগড়া, ইকর, এগরা, এলাইঞ্চা, ধইঞ্চা ইত্যাদি। ফলজ বৃক্ষ সমূহের মধ্যে ছিল-আম, আতা, জাম, জামরুল, কুল, বেল, তেঁতুল, নারিকেল, সুপারী, ডেফল, ডালিম, কলা, কামরাঙ্গা, পেঁয়ারা, পেঁপেঁ ইত্যাদি। জলে স্থলে একাকার হয়ে থাকতো চাইল্লা, চিঁছরা, হুগলা, খাজা, এরাইল, ফুটকি, ঝাউ, সিংরা, শালুক, শাপলা, হোগল, কুঁই ইত্যাদি।অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের অংশ না হলেও জামালগঞ্জের অনেক গ্রামে সূর্য্যলোকের অনুপ্রবেশ সহজ চিল না। অথচ এহেন জামালগঞ্জ উপজেলা উপনীত আজ বৃক্ষলতাহীন বৈদব্যের দ্বারপ্রান্তে।
১৩.৪ বালি-পাথরে জামালগঞ্জ: অতীতের খরস্রোতা রক্তি নদী বয়ে অগণিত কার্গো ফাজিলপুর মহাল থেকে বালি-পাথর সংগ্রহ করে ভাটির স্রোতে পাড়ি জমাতো দেশের বিভিন্ন নগর-শহর-বন্দরে। উক্ত মহালের পার্শ্বস্থিত বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৬/৭ হাজার শ্রমিক স্বল্প পারিশ্রমিকে লোড করে দিতো কার্গো সমূহ। সময়ান্তে স্বার্থের ঠেলা-ঠেলি হয় শ্রমিক ও মহাল মালিকগণের মধ্যে।সর্বদা কার্গো চলাচলের ফলে নদীর পাড় ক্ষয়ে গিয়ে এক সময় নাব্যতা হারিয়ে ফেলে রক্তি নদী। ক্ষীণ স্রোতধারায় বেগে চলমান কার্গো ও ষ্টীলবর্ডি নৌকার প্রতিনিয়ত অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষে ধংশ প্রাপ্ত হতো মালামালসহ ষ্টীলবডি নৌকা সমূহ। হামেশা কার্গো চলাচলে নদী পাড়ের গ্রাম সমূহের ঘটতো সলিল সমাধী।
ইত্যসব কারণে রক্তি নদীতে কার্গো চলাচল বন্দের জন্য সর্বপ্রথম নদীপাড়ের গ্রামবাসী প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর জনাব নূরুল হক আফিন্দীর নের্তৃত্বে ঢাকা সিনিয়র মুন্সেফ কোর্টে রক্তি নদীতে কার্গো চলাচল বন্দের দাবিতে মোকদ্দমা দায়ের করা হলে ১৯৯৭ সনের জুন মাসে মুন্সেফ কোর্টে নদী পূণঃখননের পূর্ব পর্যন্ত কার্গো চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এমতাবস্থায় রক্তি নদীতে কার্গো চলাচল বন্দ হলে দূর্লভপুরকে কেন্দ্র করে সুরমার দু’তীরে উন্মোচন ঘটে বালি-পাথর ব্যবসার এক নতুন দিগন্ত।
উক্ত বালি-পাথরের ব্যবসাকে কেন্দ্র কের নওয়াগাঁও, জাল্লাবাজ, সাচনা ও জামালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ষ্টীলবর্ডি নৌকা গড়ার ওয়ার্কশপ। দুর্লভপুরের বালি মহালে ২৫০ থেকে প্রায় ৩০০ শত ট্রলার ফাঝিলপুর থেকে বালি-পাথর আহরণ করছে প্রতিদিন। জাল্লাবাজ থেকে দূর্লভপুর পর্যন্ত সুরমার দু’কুলে গড়ে উঠেছে চিকচিক সোনালী বালির কৃত্রিম পাহাড়। সুবিন্যস্থ ভাবে ট্যাক দেয়া বালির সুউচ্চ স্তুপ সমূহ প্রকৃতির সৃষ্টি করা গারো পাহাড়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ না সহস্র শ্রমিকের স্বেদক্ষরা শ্রমের বিনিময়ে গড়া সঞ্চয়জাত বালির কৃত্রিম পাহাড়। এসব বালি পাথর ব্যবসা এবং ব্যবসায় নিয়োজিত শ্রমিক ও কার্গো জাহাজ নির্মান শিল্প হতে পারে এ অঞ্চলের নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ।
১৪. উপজেলারঐতিহ্যঃজামালগঞ্জ উপজেলা একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। হাওড়বেষ্টিত উপজেলা এবং রয়েছে অনেক বিলবাদল। যা জাতীয় অর্থনীতিতে খাদ্য ও আমিষের যোগানদেয়। অনেক জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান। সাচনা বাজার বৃটিশ শাসনামলে প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। জামালগঞ্জ উপজেলা কে নিয়ে একটি বহুল আলোচিত প্রবাদরয়েছে। পবাদটিহলো' মাছ বালি ধান জামালঞ্জের প্রাণ। জামালগঞ্জে রয়েছে বড় বড় হাওর। এসব হাওরে শুকনার সময় ফলে প্রচুর ধান আর বর্ষায় পাওয়া যায় মিঠা পানির বিভিন্ন সুস্বাদু মাছ।আর জামালগঞ্জের বালি পাথর দিয়ে তৈরি হয় দেশের বড় বড় স্থাপনা একথা সবারই জানা।
তথ্য সূত্রঃ ১। আদম শুমারি রিপোর্ট- ২০১১
২। উপজেলার বিভিন্ন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য
৩। জামালগঞ্জের ইতিহাস- গোলাম মর্তুজা
৪। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত- অচ্যুত চরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি
৫। কালনী তীরের লোকগীতি-ফারুকুর রহমান চৌধুরী
সাধারণ তথ্যঃ
০১। উপজেলার নাম ঃ জামালগঞ্জ।
০২। আয়তনঃ ৩৩৮.৭৪ বর্গ কিঃমিঃ।
০৩। থানাঃ ০১ (এক) টি।
০৪। ইউনিয়নঃ ০৬ (ছটি) টি ((১নং বেহেলী, ২নং জামালগঞ্জ সদর,৩নং ফেনারবাঁক, ৪নং সাচনা বাজার ও ৫নং ভীমখালী, ৬ নং জামালগঞ্জ উত্তর)
০৫। মৌজাঃ ৯৫ টি।
০৬। ইউনিয়ন ভূমিঅফিসঃ ০২ টি (সাচনা বাজার, ভীমখালী)
০৭। মোট জনসংখ্যাঃ ১৬৭,২৬০
০৮। মোট ভোটার সংখ্যাঃ ৯৯৫৪৭
০৯। গ্রাম- ১৯২ টি।
১০ । মোট পরিবারঃ ২৯৯৩৫ টি।
১১। খাদ্য গুদাম-০৭ (সাত) টি।
১২। মসজিদঃ ২৩৩ টি।
১৩। মন্দিরঃ ১৭ টি।
১৪ । আবাদযোগ্য মোট জমিঃ ২৩,৭৯৮ হেক্টর। (এক ফসলি ২১.০৫৩ হেক্টর ।
১৫। পুকুরঃ ২৬৫ টি (সরকারী-০৭ টি, বেসরকারী-২৫৮ টি), আয়তনঃ ৩৭.৮০ হেক্টর ।
১৬। মোট জলমহালের সংখ্যাঃ ৯৯ টি।
১৭। পশু সম্পদ হাসপাতালঃ ০১ টি।
১৮। স্বাস্থ্য সংক্রামত্মঃউপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ০১ টি (৩১ শয্যা বিশিষ্ট), ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ০১ টি।
১৯। পরিবার পরিকল্পনা সংক্রামত্ম ঃ পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ০৩ টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৬ টি, স্যাটেলাইট ক্লিনিক-২৮ টি।
২০। শিক্ষা সংক্রামত্মঃ মহাবিদ্যালয়-০১ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-০৮ টি, নিমণ মাধ্যমিক-০১ টি, মাদ্রাসা (আলিম)০৫ টি, মাদ্রাসা (দাখিল-০৫ টি) মাদ্রাসা এবতেদায়ী ০২ টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়-৬৩ টি বে-সরকারী রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৩টি, কিন্ডার গার্টেন-০১টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়-০৮ টি।
২১। শিক্ষার হারঃ ২৯.৬৫%।
২২। ভূমি সংক্রামত্মঃ ভূমি অফিস ০১টি, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ০২ টি, হাট বাজার ০৮ টি, কৃসি খাস জমি ৭৮৬.৭৬ একর।
২৩। যুব উন্নয়ন সংক্রামত্মঃ নিবন্ধনকৃত সমবায় সমিতিঃ ২২টি, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যুবক/যুবতি ১৪০০ জন।
২৪। সমাজ সেবা সংক্রামত্মঃ মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা-১৬২ জন ,২০০০/- হারে, বয়স্ক ভাতা-২৮১৩ জন ভাতা ৩০০/- হারে, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা ৩০০/- হারে ৮০৫ জন
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রাথমিক সত্মরে পায় ৩০০/-হারে ১২ জন এবং মাধ্যমিক সত্মরে পায় ৪০০/- হারে ১৪ জন শিক্ষার্থী, এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ৩০০/- হারে পায় ৩২২ জন।
২৫। মহিলা বিষয়কঃ মাতৃত্ব ভাতা ১০০ জন, ভিজিডি উপকার ভোগীর সংখ্যা ১৬৬৩ জন।
২৬। সমবায় সংক্রামত্মঃ মোট সমবায় সমিতি ৯২।
২৭। এল, জি, ই, ডি সংক্রামত্মঃ মোট রাসত্মা ২৩৯.৬১ টি (পাঁকা ৪৫ কিঃ মিঃ, কাঁচা১৯৪.৬১ কিঃ মিঃ)
২৮। জনস্বাস্থ্য সংক্রামত্মঃ ১০৮৫ টি, স্যানিটারী ল্যাট্রিন-১০,২৩১ টি, স্যানিটেশন-৬৩% বি, এস কেন্দ্র-০২ টি।
২৯। প্রকল্প বাসত্মবায়ন সংক্রামত্ম :
৩০। ব্যাংক সংক্রামত্মঃ সরকারী ব্যাংক -০২ টি (সোনালী, কৃষি), বে-সরকারী ব্যাংক-০২ টি (পূবালী, গ্রামীণ) ।
৩১। মুক্তিযোদ্ধা সংক্রামত্মঃ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ-০১ টি, মোট মুক্তিযোদ্ধা-১৯৯ জন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা-১১ জন।
৩২। অন্যান্যঃ ব্রাঞ্চ পোস্ট অফিস-০৫ টি, সাব পোস্ট অফিস-০১টি, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ-০১ টি।